বিশেষ প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জ ঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাকিল সাইফুল্লাহর বিরুদ্ধে গত ১০ সেপ্টেম্বর দৈনিক ন্যায়ের আলোতে একটি সংবাদ প্রচার করা হয়। শুধুমাত্র চারটি ছবি দিয়ে অল্পকিছু দাবী করে বলা হয় যে শাকিল সাইফুল্লাহ ছাত্রলীগ করতো। কিন্তু কোথাও তার কোনো ছাত্রলীগের পোস্ট পদবীর প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার্থীদের সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারি হওয়াতে বিভিন্ন সময় স্থানীয় এমপিরা প্রোগ্রামে দাওয়াত পায়। ফলে সেখান থেকে ছবি নিয়ে অযৌক্তিকভাবে দাবী করা হয় তিনি ছাত্রলীগ করতেন।
এ বিষয়ে শাকিল সাইফুল্লাহ তার ব্যক্তিগত ফেসবুক টাইমলাইনে প্রমাণসহ একটি বিস্তারিত পোস্ট করেন। যেখানে স্পষ্ট দেখা যায় তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে খুবই সরব ছিলেন। তার ফেসবুক পোস্টটি নিচে হুবহু দেয়া হলো
"১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল থেকে আমার বোনদের গায়ে হাত তোলার অপরাধী ছাত্রলীগ বিতারিত করে হলকে গণরুম-গেস্টরুম ও রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করে আসি৷ আমাদের দেয়া দাবীগুলোতে প্রভোস্ট সাইন করতে বাধ্য হয়।
এই দাবী মিথ্যা হলে আমার জিয়া হলবাসী ভাইয়েরা এখানে কমেন্ট করবেন।
২. আন্দোলনের প্রথমদিকে আমি শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেই যেখানে আমার বন্ধু সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের Kamrul Hasan, জিয়া হলের বন্ধু Ashraf Talha, Md Rakib Hossain আমার সাথে ছিল। আমি একটি লাইভ করি যেটি Post for 30 days ক্লিক করিনি। ফলে একদিন ছিল। আশা করি আমার আইডির অনেকে দেখেছেন। সেদিন আমি নিজের হাতে আমাদের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক Khaled Hasan -এর কিছু ছবি তুলি। পরবর্তীতে খালেদ জানায় সে আমাকে আন্দোলনে দেখেছে।
৩. ১৭ জুলাই হল বন্ধ করে দেয়। আমি সেদিন সকালে সোনারগাঁ চলে আসি। আমার একটি ক্যাডেট কোচিংয়ে ক্লাস ছিল বলে। তারপরেই হল বন্ধের ঘোষণা আসে।
৪. আমার এক বন্ধু Mohammad Sumon -এর গায়ে হলুদ ছিল ৪ জুলাই বৃহস্পতিবার। আর শুক্রবার বিয়ে। শনিবারে আমার একটা চাকরির পরীক্ষা থাকলেও আমি বিয়েতে যাব বলে মনস্থির করেছিলাম। যদিও বলেছি পরীক্ষার কারণে যাব না। কিন্তু পরে আন্দোলনের কারণে যাইনি। বন্ধু Zakir Hossain এর সাথে কনভারসেশন স্ক্রিনশট দেয়া হলো।
৫. আন্দোলনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমার ফেসবুক পোস্ট(যেগুলোর স্ক্রিনশট দেয়া হলো) দেখেন। একটু স্ক্রল করলেই দেখতে পাবেন। আমি তৎকালীন বিরাজমান রাষ্ট্রকে "Terrorist country" বলে আখ্যায়িত করেছি। ১৮ তারিখে পোস্ট করেছি "এ কেমন স্বৈরাচারিতা" বলে।
৬. ঐতিহাসিক ৩০ জুলাই রাষ্ট্রীয় শোককে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে প্রোফাইল পিকচার লাল করে দিয়েছি।
৭. ১৮ জুলাই আমি, বড়ভাই Alauddeen Rafiq, ছোটভাই Md Mosharaf Hossain, Rabiul Evan, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোটভাই Akib Hasan এবং Emon Hossain, দনিয়া কলেজের সাইফুল ও তাদের সোনারগাঁ কলেজের এক বন্ধুসহ বেশ কয়েকজন আন্দোলন করার জন্য মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এবং পরে হাবিবপুর ঈদগাহ ময়দানে একত্রিত হই। কিন্তু ছাত্রলীগ হামলা করাতে সেদিন আর আন্দোলন করতে পারিনি।
ক্লারিফিকেশনের জন্য ওদেরকে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন। মেনশন করে দিলাম।
৮. খুনি হাসিনা যেদিন সাধারণ শিক্ষার্থীদের "রাজাকার" বলে আখ্যায়িত করলো সেদিন রাতে আমরা ক্যাম্পাসে "তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার" স্লোগানে ক্যাম্পাস মুখরিত করে ফেললাম। আমি আমার ফোনের ক্যামেরা অন করে, মাইক্রোফোন লাগিয়ে পুরো আন্দোলন ভিডিও করে ফেললাম। অনেকের সাক্ষাৎকার নিলাম। দুর্ভাগ্যবশত মাইক্রোফোন অন করতে ভুলে যাই। ফলে কোনো ভিডিওর সাউন্ড ছিল না। পরে ডিলিট করে দেই। পুরোটা সময় সাথে ছিল জিয়া হলের আরেক বন্ধু Hafijur Rahman। আরো ছিল Rashed Riyad, সাখাওয়াত আল নুছায়ের, Bosir Ullah সহ অনেকেই। সবার নাম বললে এই পোস্ট অনেক বড় হয়ে যাবে। সেই রাতে একাত্তর হলের ছাত্রলীগের সাথে আমাদের অনেক ধস্তাধস্তি হয় এবং দৌড় দিতে গিয়ে পড়ে গিয়ে একটু আহত হই। সবাইকে মেনশন দেয়া হলো, চাইলে জিজ্ঞাসা করে নেন।
৯. আমার এলাকায় আসার পর যাদের সাথেই কথা হয়েছে একটা ব্যাপারই বলেছি বিকল্প কে জানি না কিন্তু এই সরকার আর টিকবে না। আমার গ্রামের আওয়ামীলীগ-বিএনপি যারা এসব নিয়ে আমার সাথে কথা বলেছে সবাই এই ব্যাপার জানে। বিশ্বাস না হলে এসে জিজ্ঞাসা করেন। আমি পার্সোলানি তাদের নাম আপনাদের বলে দিব।
১০. আমি ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে হল সংসদে পাঠকক্ষ সম্পাদক পদে ছাত্রলীগের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। এবং প্রহসনের সেই নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছি। সেই থেকে আমার বন্ধুরা আমাকে বলতো ছাত্রলীগের এগেইন্সটে ইলেকশন করেছো, সুতরাং তোমার সরকারি চাকরি হবে না। এর পরেও যারা বলে আমি ছাত্রলীগ করেছি তারা কোন গ্রাউন্ডে একথা বলে আমার জানা নেই।
১১. আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইটি বড় বড় অরাজনৈতিক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি ছিলাম। ফলে সিটিং এমপি মন্ত্রীদের নিয়ে আমাদের অনেক প্রোগ্রাম করতে হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার্থীদের সংগঠন ডুসানের সভাপতি আড়াইহাজারের হওয়াতে নজরুল ইসলাম বাবু সব সময় দাওয়াত পেতো। এভাবে দুইটি প্রোগ্রামেই সোনারগাঁয়ের এমপিও দাওয়াত পায়। এতে করে কোন ভাবেই প্রমাণ হয় না যে আমি ছাত্রলীগ করেছি। নারায়ণগঞ্জের অনেক বড় বড় নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ থাকা সত্ত্বেও কেন ছাত্রলীগের সামান্য একটি ছোট পোষ্ট আমি নিলাম না এই ব্যাপারটি ভেবে দেখবেন। আমি সবসময়ই বলতাম ছাত্রলীগ করলে আমার গুনাহ হবে। কারণ বাংলাদেশের রাজনীতি কলুষিত এখানে রাজনীতি করা মানে তাদের জুলুমকে সমর্থন করা সুতরাং আমি কোনদিন কোন রাজনৈতিক দলে কোনরকম পোস্ট পদবী নামের সাথে লাগাইনি। সারা জীবন চেষ্টা করেছি কোন মানুষের সাথে যেন কোনরকম খারাপ সম্পর্ক না হয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাবলীগের সাথে জড়িত ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও আমার ইচ্ছা আছে তাবলীগের সাথে জড়িত থাকার। যদি কখনো রাজনীতি করি তাহলে সেটা হতে হবে সকল প্রকার কলুষতামুক্ত। যারাই আমাকে বলছেন নজরুল ইসলাম বাবুর সাথে ছবি দেখিয়ে বা কায়সার হাসনাতের সাথে ছবি দেখিয়ে ছাত্রলীগ করেছি তারা পারলে ছাত্রলীগের কমিটিতে আমার একটি পোস্ট দেখান কিংবা প্রমাণ করুন আমি ছাত্রলীগ করেছি। শুধু ছবি দেখলেই বলে দিবেন না কোন রাজনৈতিক দল করি। কারণ খুনি হাসিনার সাথে বেগম খালেদা জিয়ারও ছবি রয়েছে। এটা প্রমাণ করে না বেগম খালেদা জিয়া আওয়ামীলীগ করে।
আর যদিও আমি ছাত্রলীগ করতাম তবুও আন্দোলনে আমার জুলুম বিরোধী অবস্থান আমার পরিচয় স্পষ্ট করে দেয়। যেমনটি আমরা জানি সমন্বয়ক সার্জিস আলমের ক্ষেত্রেও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকতে হলে ছাত্রলীগ করা বাধ্যতামূলক। প্রথম বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রাম, গেস্টরুম করতেই হতো। সেই হিসেবে ফেসবুকে রাজনৈতিক পোস্ট করা, ভাইদের পোস্টে কমেন্ট করা ইত্যাদি করতে চাপ প্রয়োগ করা হতো। আমার এরকম পোস্ট যেগুলো নিয়ে কথা বলা হচ্ছে সেসব ২০১৮ সালের। তখন আমি ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট। দেখেন ছবিতেই ডেট দেয়া আছে।"
শাকিল সাইফুল্লাহর ফেসবুক আইডি লিংক-
https://www.facebook.com/shakil.sonargaon?mibextid=ZbWKwL
উৎসাহী জনতা তার ফেসবুক প্রোফাইলে গিয়ে পোস্টটি দেখে আসার অনুরোধ করা হইলো।